পাকিস্তানে টিটিপি’র হয়ে বাংলাদেশি তরুণদের লড়াই: এক ভয়ঙ্কর সংকেত!

 

পাকিস্তানে টিটিপি’র হয়ে বাংলাদেশি তরুণদের লড়াই: এক ভয়ঙ্কর সংকেত

গত ছয় মাসে পাকিস্তানে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) হয়ে দুই বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যুর খবর এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। সর্বশেষ গত শুক্রবার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত ১৭ টিটিপি সদস্যের মধ্যে মাদারীপুরের ফয়সাল নামে একজন বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা হয়। এর আগে এপ্রিলে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে আহমেদ জুবায়ের ওরফে যুবরাজ নামে আরেক বাংলাদেশি নিহত হন।

এই ঘটনাগুলো শুধু পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্যও গভীর প্রশ্ন তুলছে। কীভাবে বাংলাদেশের তরুণরা পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলোর সাথে যুক্ত হচ্ছে?

বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের জঙ্গি নেটওয়ার্কের যোগসূত্র:


Photo: bbc






বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। ৯০-এর দশক থেকেই আফগান যুদ্ধ ও আল-কায়েদার মাধ্যমে বাংলাদেশি উগ্রপন্থীদের পাকিস্তান-আফগানিস্তান ঘরানার জঙ্গিবাদের সাথে যোগাযোগ তৈরি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামের সংগঠনের সাথে আল-কায়েদা ও টিটিপির সম্পর্ক থাকার তথ্যও উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছে, টিটিপি’র হয়ে কাজ করা কিছু বাংলাদেশি সৌদি আরব ও দুবাইকে ‘ট্রানজিট রুট’ হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে পৌঁছাচ্ছে। জুলাই মাসে আটক হওয়া দুই বাংলাদেশি যুবকও একই পথে গিয়েছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে।

কেন তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে?

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন মনে করেন, উগ্রপন্থার এই সংযোগ বহু পুরনো। তার ভাষায়, “আমরা এমনকি ঢাকার বায়তুল মোকাররমের সামনে প্রকাশ্যে মুজাহিদ সংগ্রহের ব্যানারও দেখেছি।” যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে বাংলাদেশে এসব তৎপরতা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, কিন্তু পাকিস্তানে নিহত দুই তরুণের ঘটনা প্রমাণ করে, নেটওয়ার্ক পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

এক্ষেত্রে ধর্মীয় উগ্রবাদী দীক্ষা, ভার্চুয়াল প্রচার, এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের ছদ্মবেশে তরুণদের টেনে নেওয়ার মতো কারণগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

"বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা"

এই ঘটনার পর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান বাড়ানো হয়েছে। তবুও প্রশ্ন থেকে যায়: যদি বাংলাদেশ থেকে তরুণরা এখনও পাকিস্তানের জিহাদি নেটওয়ার্কে যোগ দিচ্ছে, তবে দেশীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কোথায় ফাঁক রয়ে গেছে?

এমন প্রবণতা বাংলাদেশের জন্য শুধু কূটনৈতিক সংকটই নয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। কারণ আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কে বাংলাদেশি অংশগ্রহণের প্রমাণ বিশ্ব মঞ্চে দেশের ভাবমূর্তিকেও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে।

শেষকথা:

পাকিস্তানে নিহত দুই বাংলাদেশির ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিলো যে, উগ্রবাদের শেকড় কেবল ভৌগোলিক সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়। সামাজিক সচেতনতা, শিক্ষাব্যবস্থার ভেতরে সমালোচনামূলক চিন্তা জাগানো, এবং অনলাইন প্রোপাগান্ডা রোধে প্রযুক্তিগত নজরদারি—এসবকে আরও জোরদার করা এখন সময়ের দাবি। না হলে, বিদেশের মাটিতে আরও কতজন ফয়সাল বা জুবায়ের নিঃশব্দে হারিয়ে যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই।


Post a Comment

Previous Post Next Post