ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন: এবার প্রার্থীকে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছেন ভোটাররা, আসছে ‘ভোটের সাথী’ অ্যাপ - বাংলাদেশ ও বিশ্বের সর্বশেষ খবর, খেলা, বিনোদন, রাজনীতি ও বাণিজ্যের আপডেট | TrendTodays
সর্বশেষ:

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন: এবার প্রার্থীকে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ পাচ্ছেন ভোটাররা, আসছে ‘ভোটের সাথী’ অ্যাপ

 

দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তিনির্ভর নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ।

 আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে চলেছে বিশেষ একটি নির্বাচনী অ্যাপ্লিকেশন

যার নাম ‘ভোটের সাথী’। এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ভোটাররা তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীদের সরাসরি প্রশ্ন করার এবং তাদের সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য জানার সুযোগ পাবেন।
এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি প্রার্থী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ এবং জবাবদিহিতার একটি নতুন ক্ষেত্র তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারের আইসিটি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) এই অত্যাধুনিক অ্যাপটি তৈরি করছে। এটিকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বাস্তবায়নে সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই অ্যাপটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন এবং এর বাস্তবায়নে সরকারের কোনো অতিরিক্ত আর্থিক ব্যয় হবে না। এটি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে ভোটারদের প্রযুক্তিভিত্তিক সেতুবন্ধ তৈরি করবে।
সুশীল সমাজ ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, এটি একটি সুচিন্তিত পদক্ষেপ। আগে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার শুধু দলীয় প্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, কিন্তু এখন সরাসরি প্রশ্নের সুযোগ থাকায় প্রার্থীরা জনকল্যাণ ও নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আরও বেশি সচেতন থাকবেন।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীমের অভিমত, এই অ্যাপ ডিজিটাল যুগে প্রার্থী ও ভোটারের সংযোগ বাড়িয়ে সংঘাত কমাবে এবং নির্বাচনের পরেও জনসেবার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

অ্যাপের ৬টি মূল বৈশিষ্ট্য:

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার ভিত্তিতে তৈরি ‘ভোটের সাথী’ অ্যাপের অনলাইন ও মোবাইল সংস্করণে মোট ছয় ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ফিচার সন্নিবেশিত হয়েছে:
১. প্রার্থীর বিস্তারিত তথ্য প্রদর্শন: প্রার্থীর হলফনামা, সম্পদের বিবরণী, আয়কর তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক পরিচিতি এবং নির্বাচনী ইশতেহার— সব তথ্য ভোটারদের জন্য প্রদর্শিত হবে।
২. সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ: ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারবেন এবং প্রার্থীরা সেগুলোর উত্তর দিতে পারবেন।
৩. ভোটকেন্দ্রের তথ্য: নিজ নিজ ভোটকেন্দ্রের অবস্থান ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য খুব সহজে জানা যাবে।
৪. অনিয়ম রিপোর্ট: ভোট চলাকালীন বা প্রচারণায় কোনো ধরনের অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তা দ্রুত অ্যাপের মাধ্যমে রিপোর্ট করা যাবে।
৫. তথ্যের সত্যতা যাচাই: ফ্যাক্ট-চেকিং এবং মনিটরিং সংস্থাগুলো অ্যাপে প্রদর্শিত প্রার্থীর তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারবে।
৬. পৃথক ড্যাশবোর্ড: ব্যবহারকারীদের জন্য একটি পৃথক ড্যাশবোর্ড থাকবে, যেখানে তারা ভোটের অনিয়ম এবং প্রার্থীর প্রতিশ্রুতিগুলো লিপিবদ্ধ ও পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

অ্যাপটির সফল কার্যকারিতার জন্য আইসিটি বিভাগ নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণী, 

হলফনামা, আসনভিত্তিক তালিকা, ভোটার তথ্য এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত সংবেদনশীল ডেটা চেয়েছে।
তবে, নির্বাচন কমিশনের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ইসির ডেটাগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান বা ভেন্ডরকে এসব তথ্য সরাসরি অ্যাক্সেস দেওয়া নিয়ে ইসির অভ্যন্তরে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে। নিরাপত্তা বজায় রেখে তথ্য সরবরাহে কিছু বাস্তব সমস্যা ও ঝুঁকি তুলে ধরেছে কমিশন। তবে, সীমিত সময়ের জন্য ভিপিএন (VPN)-এর মাধ্যমে সীমিত অ্যাক্সেস দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, অ্যাপসটির পরীক্ষামূলক যাচাই-বাছাই শেষে আইসিটি বিভাগ এটির মেধাস্বত্ব (Intellectual Property), সোর্সকোডসহ সকল কারিগরি দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করবে এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।

No comments:

Post a Comment